শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২৬ অপরাহ্ন

ভারত থেকে হঠাৎ অনুপ্রবেশ বাড়ছে সতর্কতা দরকার বাংলাদেশের

ভারত থেকে হঠাৎ অনুপ্রবেশ বাড়ছে সতর্কতা দরকার বাংলাদেশের

সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, ভারত থেকে মানুষেরা উদ্বেগ আতঙ্কে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। সীমান্ত পারাপারের ঘটনা একটা সাধারণ ঘটনা। সব সময় কিছুসংখ্যক মানুষ সীমানা অতিক্রম করে প্রতিবেশী দেশে যাতায়াত করে। কিন্তু এবারের অনুপ্রবেশের ঘটনাটি এমন একটা সময় বেশি করে হচ্ছে যখন ভারতের ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা নাগরিকত্ব নিয়ে হুঙ্কার দিচ্ছেন। এ হুঙ্কারের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে চরম সাম্প্রদায়িক আচরণেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে তারা। তারা প্রকাশ্যেই বলছে, মুসলমানদের তাড়িয়ে দেয়া হবে। ঝিনাইদহ ও যশোর সীমান্ত দিয়ে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে কয়েক শত মানুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর হাতে আটক হয়েছে। খবরে জানা যাচ্ছে, প্রশাসনের অগোচরে এর চেয়েও কয়েক গুণ বেশি মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটছে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য বিজিবি পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে কোনো অবস্থান ঘোষণা করা হয়নি।
দৈনিক প্রথম আলো ২১ নভেম্বর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে দশ দিনে অনুপ্রবেশের সময় ২০৩ জনকে আটক করেছে বিজিবি। পত্রিকাটি সংবাদ সংস্থা ইউএনবিকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, গত বুধবার যশোরের বেনাপোল ও দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় ৫৪ জনকে আটক করে বিজিবি। দৈনিক মানবজমিনের এক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, মহেশপুরের জলুলী, পলিয়ানপুর ও খোসালপুর সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটছে। বিজিবি সূত্রের খবর, গত ২০ দিনে ৮৯ নারী, ৭১ পুরুষ ও ৬৪ শিশুকে আটক করা হয়েছে। ১৯ ও ২০ নভেম্বর তারা আটক করেছে ৯ জনকে। পত্রিকাটি মহেশপুর এলাকাবাসী সূত্রে জানাচ্ছে, বিজিবি যে ক’জন অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অনুপ্রবেশকারী প্রতিদিন বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। অনুপ্রবেশকারীদের মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।
অনুপ্রবেশকারীদের কাছে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এনআরসি ও ভারতীয় স্থানীয়দের নির্যাতন আতঙ্কে তারা দেশ ছাড়ছেন। তারা এমন একসময় বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন, যখন আসামে ১৯ লাখের বেশি মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ঘোষণা করেছেÑ সারা ভারতে এনআরসি করা হবে। আর তাদের নেতারা মুসলমানদের লক্ষ্য করে হুঙ্কার ছাড়ছেন। এই বিশেষ ধর্মীয় লোকদের দেশছাড়া করা হবে। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে আটক হওয়া ব্যক্তিদের প্রায় সবাই মুসলমান। বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসন অনুপ্রেবশ ইস্যুটি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছে। অনুপ্রবেশ বন্ধে বিজিবি কঠোর অবস্থান নিয়েছেÑ এমনটা এখনো দেখা যাচ্ছে না।
আসামের নাগরিকপঞ্জিতে বাদ পড়া নাগরিকদের নিয়ে উদ্ভূত উদ্বেগের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দু’বার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হয়েছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী দু’বারই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বারবার এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করে চলেছেন। এর মধ্যে সারা ভারতে নাগরিকপঞ্জি তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে বিজেপি। অনুপ্রবেশকারীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় এর মধ্যে হুমকি-ধমকি শুরু হয়ে গেছে। তাই জীবন বাঁচাতে জায়গা-সম্পত্তি ছেড়ে দিয়ে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করেছেন। এটা বাংলাদেশ অভিমুখে অনুপ্রবেশের সূচনা কি না সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। ভারত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আশ্বাসের বিষয়টিকে মেনে নিলে বাংলাদেশ ভুল করবে বলেই মনে হচ্ছে। এর আগেও ভারত বিভিন্ন ব্যাপারে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছিল। তারা সেসব আশ্বাস পরে রক্ষা করেনি। ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তা চুক্তিসহ অনেক দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে এমন আশাভঙ্গ হতে আমরা দেখেছি। তাই অনুপ্রবেশের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত। এ ব্যাপারে এখনই বাংলাদেশকে তার নীতি স্থির করা উচিত।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877